মোবাইল বা সেলুলার টেলিফোন প্রযুক্তির প্রজন্মগুলির বৈশিষ্ট্য
মোবাইল ফোন প্রযুক্তির উন্নয়নের এক একটি ধাপ বা পর্যায়কে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম বলে। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চারটি প্রজন্মে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১) প্রথম প্রজন্ম (1G)
২) দ্বিতীয় প্রজন্ম (2G)
৩) তৃতীয় প্রজন্ম (3G)
৪) চতুর্থ প্রজন্ম (4G)
প্রথম প্রজন্ম (1G):
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যে সকল মোবাইল ব্যবহার করা হতো তাকে প্রথম প্রজন্মের মোবাইল ফোন বলে। ১৯৭৯ সালে জাপান Advanced Mobile Phone Service (AMPS) নামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে প্রথম প্রজন্মের মোবাইল সিস্টেম চালু করে।
প্রথম প্রজন্ম (1G) |
প্রথম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য :
১.
প্রথম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এনালগ সিগনাল ব্যবহার করা হতো।
২.
অপেক্ষাকৃত কম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করা হতো। রোমিং সুবিধা ছিল না।
৩. FDMA (Frequency Division Multiple Access) এনকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো।
৪.
এ সময় কথোপকথন চলাকালে ব্যবহারকারী স্থান পরিবর্তন করলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
৫.
কমিউনিকেশন সিকিউরিটি কম ছিল।
৬.
সিগনাল এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো না।
৭.
প্রথম দিকের মোবাইল ফোনগুলো ছিল ওজনে বেশ ভারি তবে ধীরে ধীরে হালকা মোবাইল ফেন তৈরী হতে থাকে।
৮. সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোপ্রোসেসর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত।
উদাহরণ: Advanced Mobile Phone Service (AMPS), Nordic Mobile Telephony (NMT) টেলিফোন ইত্যাদি
দ্বিতীয় প্রজন্ম (2G):
১৯৯২ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে যে সকল মোবাইল ব্যবহার করা হতো তাকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন বলে। দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য ভয়েসে নয়েজমুক্ত ডিজিটাল পদ্ধতির রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (2G) |
দ্বিতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য
১. দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিগনাল ব্যবহার করা হয়।
২. অপেক্ষাকৃত বেশি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার ও সীমীত মাত্রায় আর্ন্তজাতিক রেমিং সুবিধা চালু।করা হয়।
৩. দ্বিতীয় প্রজন্মে প্রিপেইড সিস্টেম চালু হয়।
৪. উচ্চ গতির ইন্টারনেট ডেটা স্থানান্তর চালু হয়।
৫. দ্বিতীয় প্রজন্মে সিমকার্ডের ব্যবহার, SMS, MMS সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।
৬. GSM ও CDMA স্টান্ডার্ড টেলিকম ব্যবহার, ভয়েস মেইল ব্যবহারের সুবিধা।
উদাহরণ: GSM-900, GSM-1800 GSM-R, GSM-1900 GSM-400
তৃতীয় প্রজন্ম (3G)
২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে যে সকল মোবাইল ব্যবহার করা হতো তাকে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন বলে। ২০০১ সালে জাপানের NTT DoCoMo পরীক্ষামূলকভাবে ৩য় প্রজন্মের মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে। তৃতীয় প্রজন্মে উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফার ও মাল্টিমিডিয়া ডেটা ব্যবহারসহ স্ট্যান্ডার্ডের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এ প্রজন্মেই আধুনিক মোবাইল টেকনোলজি এর বাস্তবায়ন করা হয়। তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং ব্যবহার করে উচ্চ গতির ডেটা স্থানান্তর EDGE (Enhanced Data
Rates for Global Evolution) মডেম এর ব্যবহার।
তৃতীয় প্রজন্ম (3G) |
তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য :
১. EDGE, GPRS, TD-SCDMA,
TD-CDMA এনকোডিং পদ্ধতি এ প্রজন্মে ব্যবহার করা হয়।
২. প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং ব্যবহার করে উচ্চ গতির ডেটা স্থানান্তর
৩. Wi-Fi, Wi-Max, Wap
প্রোটকলের ব্যবহার
৪. উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের ব্যবহার ও ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা।
৫. MMS, ভয়েস কল, ভিডিও কল, মোবাইল টিভি, ভিডিও কনফারেন্স সুবিধা
৬. মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সেবা প্রদান করা যায়।
উদাহরণ: UMTS, IMT,
MC-CDMA, EDGE, GSM ইত্যাদি.
চতুর্থ প্রজন্ম (4G)
২০০৪ থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে যে সকল মোবাইল ব্যবহার করা হতো তাকে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোন বলে। এ প্রজন্মের মোবাইল সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট হল ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) ভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এবং 3G
এর তুলনায় ৫০ গুণ বেশি ডেটা স্থানান্তর গতি।
চতুর্থ প্রজন্ম (4G) |
চতুর্থ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য
১. 4G হলো IP ভিত্তিক ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক।
২. 4G তে ৩এর তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. অতি উচ্চ ডেটা ট্রান্সফারের হার যা 20mbps ও ডেটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে হাই ফ্রিকুয়েন্সির ব্যবহার ।
৪. ইন্টারনেট মডেম ও সিমকার্ড ব্যবহার করে সরাসরি কম্পিউটারে ইন্টারনেট অ্যাকসেস করার সুবিধা।
৫. 4G ডিভাইসগুলোকে টঝই পোর্টের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারে সংযোগ দেওয়া যায়।
৬. ত্রি-মাত্রিক ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা
উদাহরণ : ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের সাথে ইউএসবি ওয়্যারলেস মডেম। মোবাইল ওয়েব অ্যাকসেস, আইপি টেলিফোন, গেমিং সার্ভিসেস, হাই-ডেফিনেশন মোবাইল টেলিভিশন, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং থ্রিডি টেলিভিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হবে। Wi-Max,
Flash-OFDM, 3GPP LTE ইত্যদি ৪র্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোন।
আরো কিছু প্রশ্ন
রোবটিকস বা রোবট কি?রোবটের গঠনগত উপাদানসমূহ কি কি?
ই-হেলথ কী? টেলিমেডিসিন একটি সেবা আলোচানা কর।
জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতাগুলি কি কি?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?
দুরশিক্ষণ বা ডিসট্যান্স লার্নিং
টেলি কনফারেন্স ও ভিডিও কনফারেন্স কী?
জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেম কাকে বলে?
সাধারণত রোমিং বলতে আমরা কি বুঝি?
No comments
Don't share any link