বিশ্বগ্রাম কি

 

 

বিশ্বগ্রাম বলতে কি বুঝ? বিশ্বগ্রামের ধারণা ব্যাখ্যা কর।



বিশ্বগ্রামঃ

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ হল ইন্টারনেট ভিত্তিক বিশ্ব বা অনলাইন ভিত্তিক বিশ্ব। বিশ্বগ্রাম হলো এমন একটি পরিবেশ যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং পরস্পরের মধ্যে দ্রুত সময়ে তথ্য আদান প্রদান করে ও যোগাযোগ রক্ষা করে।

 

ব্যাখ্যাঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যানে বিশ্ব একটি ভার্চুয়াল গ্রামে পরিনত হয়েছে, দুরকে করেছে নিকট। সমগ্র পৃথিবী মানুষের হাতে মুঠোয় নিয়ে এসেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হল ইন্টারনেট। বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রবক্তা মার্শাল ম্যাকলুহান।

 

 

বিশ্ব গ্রামের উপাদানসমূহঃ

হর্ডওয়ার বা যন্ত্রপাতিঃ তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তির মুলেই হল কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি। অতএব হার্ডওয়ারের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার হার্ডওয়ার, ল্যান্ড ফোন, মোবাইল বা স্মার্ট ফোন, অডিও ভিডিও রেকর্ডার, টেলিভিশন, স্যাটেলাইট, বিভিন্ন ক্যাবল, কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন ডিভাইস ইত্যাদি।

 

সফটওয়ার বা প্রোগ্রামঃ সফটওয়ার হল প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামসমূহ যা হার্ডওয়ারকে কার্যক্ষম করে। সফটওয়ারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়ার, কমিউনিকেশন সফটওয়ার, বিভিন ধরনের প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম।

ডেটা ও ইনফরমেশনঃ ডেটা হলো তথ্যের একক উপাদান যা বর্ণ, সংখ্যা, চিহ্ন, অডিও ভিডিও ইত্যাদিকে বুঝায়। আর ডেটাকে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরী হয় ইনফরমেশন বা তথ্য। বিশ্ব গ্রাম প্রতিষ্ঠায় এই ডেটা বা ইনফরমেশনই মূল উপাদান।

নেটওয়ার্ক বা ডেটা আদান প্রদান মাধ্যমঃ ডেটা আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয় দুটি মাধ্যম। একটি তারযুক্ত যেমন- বিভিন্ন প্রকার ক্যাবল ও অপরটি তারবিহীন যেমন- মাইক্রোওয়েভ, স্যাটেলাইট ইত্যাদি। বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ডই হল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংযুক্তি।

মানুষের সক্ষমতাঃ বিশ্বগ্রাম মূলত: তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির প্রসার ঘটিয়ে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো ব্যবহার করে বিশ্বগ্রামের সুফল বৃদ্ধি করা।

কার্যপদ্ধতিঃ কার্যপদ্ধতি না জানলে প্রযুক্তিকে কাজ লাগানো সম্ভব নয়। এজন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা জানার দ্বারা প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা।

বিশ্বগ্রামের সুবিধাঃ

১) সমগ্র পৃথিবী মানুষের হাতে মুঠোয় নিয়ে এসেছে।

২) পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, পরিবেশ, জনপথ ইত্যাদি সম্পর্কে তাৎক্ষনিক জানার সুযোগ তৈরী হয়েছে।

৩) মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ সহজতর ও উন্নত হয়েছে।

৪) মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।

৫) তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে শিক্ষার্থী ঘরে বসে অনলাইনে লাইব্রেরী, ক্লাসে ও পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারছে।

৬) অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা পাচ্ছে।

৭) ব্যবসা বানিজ্য সহজ ও লাভজনক করে তুলছে এবং ব্যাপক প্রসার ঘটছে।

৮) ঘরে বসে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

৯) টেলি ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরস্পরের যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

১০) মানুষের কাজে দক্ষতা ও গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

বিশ্বগ্রামের অসুবিধাঃ

১) ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে অনৈতিক কর্মকান্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং কোন সীমাবদ্ধতা না থাকায় যুব সমাজের সামাজিক ও নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটছে।

২) তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না অর্থাৎ তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে।

৩) হ্যাকিংসহ বিভিন্ন সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হচ্ছে।

৪) বিশ্বগ্রামের দ্রুত প্রসারের ফলে প্রযুক্তি বিষয়ে অদক্ষ ও বয়স্করা চাকরি হারাচ্ছে।

No comments

Don't share any link

Theme images by rusm. Powered by Blogger.