ফাইবার অপটিক ক্যবল কি? ফাইবার অপটিক ক্যবল এর গঠন ও সুবিধা অসুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য কি? (How do we define Fiber Optic Cable and Its structure, advantages and disadvantages
ফাইবার অপটিক ক্যবলের গঠন ও সুবিধা অসুবিধা (Definition of fiber optic cable and its advantages and disadvantages with structure and characteristics.)
ফাইবার অপটিক ক্যবল
অপটিক্যাল ফাইবার হলো ডাই-ইলেক্ট্রিক পদার্থ যেমন কাঁচ বা সিলিকার তৈরি সুক্ষ্ম তন্তুর মতো এমন এক ধরনের ক্যাবল যা ডেটাকে আলোক সংকেতে রুপান্তর করে আলোর গতিতে স্থানান্তর করে।
ফাইবার অপটিক ক্যবলের গঠন
ফাইবার শব্দের অর্থ আঁশ বা তন্তু সুতরাং প্রতিটি ফাইবার সুক্ষ্ম আঁশের মত। ইহা একটি EMI মুক্ত (বৈদ্যুতিক প্রভাব মুক্ত) নন মেটালিক ক্যাবল। প্রতিটি ফাইবারের মূল তিনটি অংশ থাকে। যথা- কোর, ক্ল্যাডিং এবং জ্যাকেট।
Fiber Optic Cableকোর
অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক অংশকে বলা হয় কোর যার উপাদান হচ্ছে উন্নত মানের কাঁচ বা প্লাস্টিক। আলোক সিগনাল সঞ্চালনের প্রধান কাজটি করে ফাইবারের অভ্যন্তরের এই কোর। এর ব্যাস ৮ থকে ১০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোরের প্রতিসরাংক বেশি।
ক্লাডিং
কোরকে আবদ্ধ করে থাকা বাইরের ডাই-ইলেকট্রিক আবরণকে ক্ল্যাডিং বলা হয়। ক্লাডিং হচ্ছে কাঁচের বা প্লাস্টিকের তৈরী স্তর যা কোর থেকে নির্গত আলোক রশ্মি প্রতিফলিত করে তা পুনরায় কোরে ফেরত পাঠায়। ক্লাডিংয়ের প্রতিসরাংক কোরের প্রতিসরাংক অপেক্ষা কম হয়ে থাকে।
জ্যাকেট
প্লাস্টিক এবং বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরী সবচেয়ে বাইরের অংশ হল জ্যাকেট। জ্যাকেট কোর ও ক্লাডিংকে অর্থাৎ ফাইবারকে জলীয়বাষ্প, আদ্রতা, ঘর্ষণ, মচকানো এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।
ডেটা প্রেরণ পদ্ধতি
অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণের ক্ষেত্রে তিনটি অংশ কাজ করে। যথা ১. প্রেরক যন্ত্র ২. মাধ্যম, ৩. গ্রাহক যন্ত্র।
প্রেরক যন্ত্র
প্রেরিত ডেটা অর্থাৎ ডিজিটাল বা এনালগ সংকেতকে প্রেরক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত LED (লাইট ইমিটিং ডায়োড) বা লেজার ডায়োড প্রয়োজনীয় মডুলেশনের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার উপযোগী আলোক তরঙ্গে রূপান্তর করে।
মাধ্যম
এরপর উক্ত আলোক তরঙ্গ অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে আলোর পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছায়।
গ্রাহক যন্ত্র
গ্রাহক যন্ত্র ফটো ডিটেক্টর বা ফটো ডায়োট ও প্রসেসিং ইউনিট আলোক তরঙ্গকে প্রয়োজনীয় অ্যাম্পিলিফিকেশন, ফিল্টারিং এবং ডিমডুলেশনর মাধ্যমে কাংখিত ডেটায় পরিনত করে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল তৈরির উপাদান
এর উপাদানগুলির মধ্যে সোডা বোরো সিলিকেট, সোডা লাইম সিলিকেট, সোডা অ্যালুমিনা সিলিকেট ইতাদি মাল্টিকম্পোনেন্ট কাঁচ বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্লাডিং তেরির জন্য উন্নত মানের প্লাষ্টিক ব্যবহার করা হয়। তরে সাধারন কাঁচের মধ্যে আভ্যন্তরী প্রতিফলন হয়না তাই সাধারণ কাঁচ ব্যবহার হয় না ব্যবহার হয় না।
অপটিক্যাল ফাইবারের বৈশিষ্ট্য বা সুবিধা
১.
অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা হলো উচ্চ ব্যান্ডউইডথ।এ ক্যাবলের মধ্য দিয়ে গিগাবাইট রেঞ্জ বা তার চেয়ে বেশি গতিতে ডেটা স্থানান্তর করতে পারে।
২. এতে আলোকের পূর্ণ আভ্যন্তরীন প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে পৌঁছায়।
৩.
বাইরের অন্যান্য সিগনালের ইন্টাফেয়ারেন্স নেই বললেই চলে।
৪.
অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে।
৫.
আকারে ছোট এবং ওজন অত্যন্ত কম।
৬.
যেহেতু এটি মাল্টিকম্পোনেন্ট কাঁচ বা উন্নত প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি তাই এটি দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না সুতরাং এটি বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব(EMI) মুক্ত।
অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধা
১. অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন হয়।
২. এটির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
৩. অন্যদিকে অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধা হলো এটিকে U আকারে বাঁকানো যায় না। লে তা ভেদ করতে পারে না। মাইক্রোওয়েভ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ট্রান্সমির্ট এন্টেনা এবং রিসিভার এন্টেনা একই দিকে থাকে।
Optical Fiber |
ফাইবার অপটিক ক্যবলের ব্য্যবহার
উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে ইহা ব্যবহৃত হয়। সাবমেরিন ক্যাবল হিসেবে এই তার ব্যবহৃত হয়। ফাইবার অপটিক ক্যাবল কানেক্ট করার জন্য ST কানেক্টরের প্রয়োজন হয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকারভেদ
ফাইবারের গাঠনিক উপাদানের প্রতিসরাংকের উপর ভিত্তি করে ফাইবার দুই প্রকার। যথা-
১. স্টেপ ইনডেক্স ফাইবার : স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারের কোরেরপ্রতি সরাংক সর্বত্র সমান থাকে।
২. গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবার : গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতি সরাংক কেন্দ্রে সবচাইতে বেশি থাকে। ব্যসার্ধ বরাবর কমতে থাকে।
এছাড়াও কোরের ব্যাস অনুযায়ী ফাইবার ২ প্রকার। যথা-
ক. সিঙ্গেলমোডঃ ইহার কোর সাইজ ৮/১২৫ মাইক্রোন. শুধুমাত্র একটি ট্রান্সমিশন দীর্ঘ দুরত্ব অতিক্রম করতে এই ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
খ. মাল্টিমোডঃ ইহার কোর সাইজ ৬২.৫/১২৫ মাইক্রোন.এই ফাইবার দিয়ে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘের আলোক রশ্মি পাঠানো যায় এবং একইসাথে অনেকগুলি ট্রান্সমিশন পাঠানো যায়।
কো এক্সিয়াল ক্যাবল, টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল ও ফাইবার অপটিক ক্যাবল এর মধ্যে তুলনা
কো এক্সিয়াল ক্যাবল |
টুইস্টেড পেয়র ক্যাবল |
ফাইবার অপটিক ক্যাবল |
১. এই ক্যাবলের কেন্দ্রে কপার তারসহ দুটি পরিবাহী ও দুটি অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি। |
১. এই ক্যাবল দুটি পরিবাহী তামার তার সুষমভাবে পেঁচিয়ে তৈরি |
১. এই ক্যাবল কাঁচের তন্তু দিয়ে তৈরি যার মাধ্যমে আলোর গতিতে তথ্য আদান প্রদান হয়। |
২. থিকনেট এর ক্ষেত্রে ৫০০মি. ও থিননেটের ক্ষেত্রে ১৮৫ মি.কভারেজ দেয়। |
২. এসটিপি,ইউটিপি উভয় ক্ষেত্রে ১০০ মি. কভারেজ দেয়. |
২. সর্বোচ্চ থেকে ১০০ কি.মি. পর্যন্ত কভারেজ দেয় |
৩. এটির ব্যান্ডউইডথ ১০ Mbps |
৩. এটির ব্যান্ড উইডথ ১০ Mbps |
৩. এটির ব্যান্ড উইডথ ১০০ Mbps থেকে ২ Mbps |
৪. তারের দৈর্ঘ বেশি হলে নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। |
৪. ১০০. মিটারের বেশি হলে ডেটা প্রেরণ কঠিন হয়। |
৪. রিপিটার ছাড়াই ৫০ কি.মি. পর্যন্ত ডেটা প্রেরণ করা যায় এবং ক্যাবলের দুরত্ব বেশি হলেও শক্তি অক্ষুন্ন থাকে। |
৫. ক্যাবল টিভি সংযোগের ক্ষেত্রে এই ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। |
৫. টেলিফোন লাইনে এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয। |
৫. ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড লাইন ও সাবমেরিন ক্যাবল হিসেবে এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। |
৬. কেন্দ্রিয় কন্ডাক্টরকে EMI রোধ করে। |
৬. তামার তারগুলো পেঁচানো থাকার কারনে EMI রোধ করে। |
৬. অন্তরক পদার্থ দিয়ে তৈরি তাই EMI মুক্ত। |
৭. দামে সস্তা, ইন্সটল করা সহজ |
৭. স্বল্পমূল্য, ইন্সটল করা সহজ |
৭. অত্যন্ত দামি, ইন্সটল পদ্ধতি বেশ জটিল |
৮. ডেটার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল |
৮. ডেটার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতি দুর্বল |
৮. ডেটার উচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে |
No comments
Don't share any link