জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির

 

সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব 

বর্তমান বিশ্বে আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব অপরিসীম। বর্তমান পৃথিবী তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক বিশ্ব গ্রামে পরিনত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সরাসরি প্রভাব লক্ষ্যনীয়। নিচে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব আলোচনা করা হল-

 

যোগাযোগ ব্যবস্থায়ঃ

সড়কপথ, রেলপথ, আকাশপথ, জলপথ প্রভৃতি যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যপকভাবে ব্যবহার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ, দ্রুততর ও লাভজনক করে তুলেছে। এছাড়া মোবাইল, ই-মেইল, ফেসবুক ইত্যাদি যোগযোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে যে কোন স্থানের সংগে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।

 

শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যপক ব্যবহার শিক্ষাকে মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছে।  শিক্ষা গ্রহন করা বা প্রদান করা সহজ হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সকল লাইব্রেরী এখন ইন্টারনেটে। ফলে যে কোন তথ্য পেতে আর দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেট সর্বোপরি কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষার যাবতীয় তথ্য সম্প্রচারিত হচ্ছে। বিভিন্ন ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনে বসে দেওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব বলে শেষ করা যাবে না।

 

ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রেঃল

বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার আধুনিক ব্যবসা-বনিজ্য, আমদানী ও রফতানিতে উন্নয়ন এবং সাধারণ কোনাকাটসহ অনক কর্মকান্ড গতিশীলতা এসেছে। ব্যবসা বানিজ্যে দ্রুত সংবাদ আদান প্রদানের জন্য ফোন, ফ্যাক্স, টেটলিভিশন, কম্পিউটার, বুলেটিন বোর্ড, ই-মেইল ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে। ই-কমার্স ও ই-বিজনেস এর মাধ্যমে ব্যবসা বানিজ্যে ব্যপক প্রসার ঘটছে।

 

শিল্প ও সাহিত্যে ও বিনোদনের ক্ষেত্রেঃ

তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে শিল্প সাহিত্যের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে। সারা বিশ্বের সাহিত্যের সাথে ঘরে বসেই পরিচিত হওয়া যাচ্ছে। আর বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্যপযুক্তি তো আমাদের সকল চাহিদা পুরন করেছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে সারা পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। বিশ্বের বিভিন্ন চ্যানেল ঘরে বসে উপভোগ করতে পারছে একমাত্র তথ্য প্রযুক্তির কল্যানেই।

 

কৃষি ক্ষেত্রেঃ

কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যপক ব্যবহার লক্ষনীয়। বিশেষ করে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কৃষিপণ্য বিপনন ও ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রেও  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এনেছে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন।

 

শিল্প ক্ষেত্রেঃ

শিল্প পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রন, বাজারজাতকরণ, গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান উন্নত শিল্পকারখানাগুলিতে রোবট ব্যবহার করে চব্বিশ ঘন্টা কাজ পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে।

 

চিকিৎসা ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রেঃ

তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে ঘরে বসে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। বিদেশের বড় বড় ডাক্তারের পরামর্শ ঘরে বসেই নিতে পারছে। সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মানুষ মঙ্গল গ্রহে বসবাসের চিন্তাভাবনা করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বাধিক প্রয়োগ হচ্ছে বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নতিতে।

 অফিস আদালতেঃ

 বর্তমান অফিস আদালত সব প্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। অফিস হয়েছে আটোমেশন, ব্যবহার হচ্ছে ইন্টারনেট, ওয়েবসাইটসহ নতুন নতুন প্রযুক্তি। ব্যংকগুলি সম্পুর্ণ অটোমেশন ও অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে।

 প্রকাশনা শিল্পেঃ

প্রকাশনা শিল্পে কম্পিউটারাইজড প্রকাশ যুগান্তকারী বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। বেড়েছে সৌন্দর্য ও উৎকর্ষতা।

 

আবহাওয়ার পুর্বাভাসেঃ

 আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভুল ও দ্রুত সম্প্রচারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষনীয়।

 দেশ পরিচালনায়ঃ

দেশপরিচালনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ই-গর্ভনেন্স চালুর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তথ্যের আদান প্রদান দ্রুত হচ্ছে ও খরচও কমে গেছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংকোচন হচ্ছে।

 মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নেঃ

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের দক্ষতা ও কাজের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি মানুষের শক্তি অপচয় রোধ ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সহজ হচ্ছে।

 

পারিবারিক জীবনেঃ

পারিবারিক জীবনে আনন্দ-বিনোদন, পড়াশোনা, জ্ঞানার্জন, গৃহ ব্যবস্থাপনা সহ সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ছোয়া লেগেছে।

 অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষিত্রেঃ

উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও জীবনের ও পরিবেশের সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি অবদান রেখে চলেছে। এবং আগামী দিনগুলিতে তথ্য ও যোযোগ প্রযুক্তিই হবে মানুষের চব্বিশ ঘন্টার সংগী।

 

ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। যেমন-

১) তথ্য প্রযুক্তি প্রসারে আমরা সর্বদা স্বাস্থ ঝুঁকিতে ভুগছি। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার ব্রেইন ওচোখের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে।

২) সকল ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজডের ফলে বেকার সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বয়ষ্ক ও অদক্ষ কর্মিদের অফিস আদালতে অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে।

৩) তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যাক্তিগত তথ্য ও হিসাব পাচার হয়ে যাচ্ছে।

৪) অবাধ তথ্য প্রযুক্তির ফলে সমাজে অশ্লীলতা ও অনৈতিক কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুব সমাজের একাংশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে  যাচ্ছে।

৫) বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইডেড। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠি দিন দিন উন্নত হচ্ছে ও নানা সুবিধা ভোগ করছে। অপরদিকে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে অন্য গোষ্টি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আরো কিছু প্রশ্ন

বিশ্বগ্রাম কি

আউটসোর্সিং কী?

বায়োমেট্রিক পদ্ধতি আসলে কি?

সাইবার ক্রাইম মানে কি? 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি

ওয়াইম্যাক্স কি?

রোবটিকস বা রোবট কি?রোবটের গঠনগত উপাদানসমূহ কি কি?

ক্রায়োসার্জারি মানে কি? 

অফিস অটোমেশন বলতে কি বুঝ?

 ই-হেলথ কী? টেলিমেডিসিন একটি সেবা আলোচানা কর।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কী,

জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির

তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতাগুলি কি কি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?

দুরশিক্ষণ বা ডিসট্যান্স লার্নিং 

ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝ? 

টেলি কনফারেন্স ও ভিডিও কনফারেন্স কী?

 ওয়াইফাই এর পূর্ণরূপ কি

ই-কমার্স কি? 

ই মেইল কী?

স্মার্ট হোম এর সুবিধাগুলো কি?

ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেম কাকে বলে? 

বায়োইনফরমেট্রিক্স কি

সাধারণত রোমিং বলতে আমরা কি বুঝি?

টেলিফোন লাইনের তার কি তাদের প্রকারভেদ ও ব্যবহার?

1 comment:

Don't share any link

Theme images by rusm. Powered by Blogger.