প্রোগ্রাম রচনার বিভিন্ন ধাপগুলো কি কি?
প্রোগ্রাম রচনার বিভিন্ন ধাপগুলো আলোচনা
কর।
প্রোগ্রাম রচনার
ধাপসমূহ
কোন সমস্যা কম্পিউটারের সাহায্যে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। এজন্য প্রথমে পরিকল্পনা তৈরি করা হয় এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে সমস্যাটি সমধান করে প্রোগ্রাম রচনা করা হয়। এই প্রোগ্রাম রচনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে ভাগ করা হয়। ধাপগুলো হচ্ছে-
১। তথ্যানুসন্ধান ও সমস্যার বর্ণনা
প্রোগ্রামটি কী ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য রচনা করা হবে তার একটি পরিস্কার, পরিপূর্ণ ও সহজ বিবরণী তৈরি করতে হয়। উক্ত সমস্যা সম্পর্কিত সব রকমের তথ্যানুসন্ধান করতে হয়। সমস্যাটি কি ধরনের, ইহা সমাধানের জন্য কি ধরনের ইনপুট লাগবে, কিভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে, কি ধরনের আউটপুট প্রয়োজন হবে
সে বিষয়ে সকল তথ্যানুসন্ধান করতে হয়।
২। সমস্যার বিশ্লেষণ
সমস্যাটি নির্দিষ্ট করার পর সমস্যা সংশ্লিষ্ট সকল ডেটা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে সমস্যাটি সম্পর্কিত সংগৃহিত তথ্য বা উপাত্ত প্রবাহ ও গন্তব্য নির্ধারণ, সমস্যার কাঠামো নির্ধারণ ও কম্পিউটার মেমোরি নির্ধারণ ইত্যাদি এই ধাপের অর্ন্তভুক্ত। এই অংশে নিন্ম লিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হয় -
ক) ইনপুট-আউটপুটের উপাত্তের বৈশিষ্ট্য পর্যব্ক্ষেণ এবং ইনপুট-আউটপুটের সঠিক সরঞ্জামাদি নির্বাচন।
খ) সমস্যাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা । প্রয়োজনে চার্ট, তালিকা, গ্রাফ ইত্যাদির আশ্রয় নেওয়া।
গ) সমস্যাটির কাঠামোগত দিক বিশ্লেষণ ও গাণিতিক মডেল প্রস্তুত করা।
৩। প্রোগ্রম ডিজাইন (এ্যালগরিদম, ফ্লোচার্ট অংকণ ও সুডোকোড)
সমস্যা বিশ্লেষণের পর সেই অনুযায়ী প্রোগ্রাম ডিজাইন করতে হয়। মূলত প্রোগ্রামটি দ্বারা কি ফলাফল পেতে চান তার উপর ভিত্তি করে ডিজাইনের কাজ করতে হয় এবং সেই অনুযায়ী ইনপুট দিতে হয়। এই ধাপে পরিপূর্ণ গঠন পদ্ধতি এবং সুবিধাজনক অ্যালগরিদমসহ ফ্লোচার্ট ও সুডোকোড তৈরি করা হয়।
প্রোগ্রাম ডিজাইনের ক্ষেত্রে নিন্মলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হয়
ক) আউটপুট ডিজাইন
খ) ইনপুট ডিজাইন
গ) ইনপুট ও আউটপুটের মধ্যে সমন্বয় সাধন
এছাড়াও সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে প্রোগ্রামের বিভিন্ন অংশ কার্যকরী করার জন্য নিন্মলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হয়
ক) অ্যালগরিদম
খ) ফ্লোচার্ট
গ) সুডোকোড
ক)এ্যালগরিদম
এ্যালগরিদম অর্থ ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধান। অর্থাৎ একটি সমস্যাকে কয়েকটি ধাপে ভেঙে প্রত্যেকটি পর্যায়ক্রমে সমাধান করে সমগ্র প্রোগ্রাম সমাধান করার পদ্ধতিকে অ্যালগরিদম বলে।
খ) ফ্লোচার্ট অংকণ
এ্যালগরিদমকে চিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করাকে ফ্লোচার্ট বা প্রবাহ চিত্র বলে। ফ্লোচার্টের ফলে এক নজরেই প্রোগ্রামটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়।
গ) সুডোকোড
সুডো (Pseudo) একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ ছদ্ম, যা সত্য নয় বা অবাস্তব। প্রোগ্রামিংয়ে অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্টের বিকল্প হিসাবে সহজ সরল অথচ সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রোগ্রামের ধাপগুলি বর্ণনা করাই হচ্ছে সুডোকোড। অর্থাৎ প্রোগ্রামের খসড়াভাবে সংক্ষেপে স্টেটমেন্টসমূহ লিপিবদ্ধ করা যেন মনে হবে প্রোগ্রামিং কোডের মত এটিকে সুডোকোড বলে। নিচে তিনটি সংখ্যার যোগ নির্ণয়ের সুডোকোড দেওয়া হলো।
START
INPUT A, B, C
SUM=A+B+C
PRINT SUM
END
৪। প্রোগ্রাম লিখন বা কোডিং
এ্যলগরিদম, ফ্লোচার্ট বা সুডোকোড তৈরী করার পর সেই অনুযায়ী যে কোন সুবিধাজনক প্রেগ্রামিং ভাষার সাহায্যে প্রোগ্রামটি লেখাই হলো প্রোগ্রাম কোডিং। প্রোগ্রামের এই ধাপে প্রোগ্রামিং ভাষার নিয়মনীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে প্রোগ্রাম লিখতে হয়। একেক ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য একেক ধরণের ভাষা উপযুক্ত বিধায় সঠিক ভাষাটি নির্বাচন করে কোডিং করতে হয়।
৫। প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন
প্রোগ্রাম রচনা বা কোডিং করার পর তা বাস্তবায়ন করা হয়। এই
পর্বে দুটি অংশ যথা (i) প্রোগ্রাম টেস্টিং ও (ii) প্রোগ্রাম ডিবাগিং। এই পর্বের প্রথমে প্রোগ্রামকে টেস্ট করা হয় এবং টেস্ট করার পর প্রয়োজন অনুসারে ভুল সংশোধন বা ডিবাগিং করা হয়।
(i) প্রোগ্রাম টেস্টিং
প্রোগ্রাম টেস্টিং হলো প্রোগ্রামটি রচনা সম্পন্ন করার পর প্রোগ্রামটি যে
উদ্দেশ্যে তৈরী করা তা সধিত হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করা, ঠিকমত রান করছে কি না, ফল ঠিক আসছে কি না ইত্যাদি পরীক্ষা করা। অর্থাৎ প্রোগ্রামের ভুলগুলি পরীক্ষা করা। প্রোগ্রামের ভুল তিনভাগে ভাগ করা যায়।
(ii) প্রোগ্রাম ডিবাগিং
Bug অর্থ ছোট পোকা Debug অর্থ পোকা দুর করা। অর্থাৎ প্রোগ্রামিংয়ে যে ভুল-ত্রুটি থাকে সেগুলি সংশোধন করাই হলো প্রোগ্রাম ডিবাগিং। অতএব ডিবাগিং প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
প্রোগ্রামের ভুলকে যেমন তিন প্রকার ডিবাগিংও তিন প্রকার। অর্থাৎ ঐ ভুলগুলি সংশোধনই ডিবাগিং। যথা-
(ক) সিনট্যাক্স ভুল
সাধারনত: প্রোগ্রাম ভাষার ব্যাকরণগত ভুলকে সিনট্যাক্স ভুল বলা হয়। যেমন- বানান ভুল, কমা, সেমিকোলণ বা ব্রাকেট না দেওয়ার ভুল ইত্যাদি। আর এই ভুলগুলি সংশোধনই সিনট্যাক্স ডিবাগিং । সিনট্যাক্স ভুলের জন্য প্রোগ্রাম Run করে না।
(খ) লজিক্যাল ভুল
প্রোগ্রামে যুক্তিগত যে সমস্ত ভুল থাকে তাকে লজিক্যাল ভুল বলে। যেমন, <, >,<=, >=, +, -, *, / ইত্যাদি চিহ্নের ভুল। আর এই ভুলগুলি সংশোধনই লজিক্যাল ডিবাগিং। লজিক্যাল ভুলের জন্য প্রোগ্রাম Run করে কিন্তু ভুল ফলাফল প্রদর্শন করে।
গ) এক্সিকিউট ভুল বা ডেটার ভুল বা রান টাইম ভুল
কোন চলকের ইনপুট দেওয়ার সময় যদি ভুল মান দেওয়া হয় তকে এক্সিকিউট ভুল বা ডেটার ভুল বা রান টাইম ভুল বলে। আর এই ভুলগুলি সংশোধনই রানটাইম ডিবাগিং। এই ভুলের জন্য প্রোগ্রাম Run করে কিন্তু ভুল ফলাফল প্রদর্শন করে।
(**) ড্রাই রান ঃ কোন প্রোগ্রাম কম্পিউটারে সমাধানের পূর্বে খসড়াভাবে হাতেকলমে সমাধান করে ফলাফল অর্জনকে ড্রাই রান বলে।
৬। প্রোগ্রাম রক্ষণাবেক্ষণ
বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক সময় প্রোগ্রাম পরিবর্তন করতে হয়। প্রোগ্রামের উন্নতিকল্পে প্রোগ্রাম পরিবর্তন, আধুনিকিকরণ, ভুল সংশোধন ইত্যাদি প্রোগ্রাম রক্ষণাবেক্ষন
কাজের অর্ন্তভুক্ত। অপারেটিং সিস্টেম বা হার্ডওয়ারের পরিবর্তনের কারনে, ডেটার পরিবর্তনের কারনে, উন্নত ফলাফলের জন্য প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা হয়। এই প্রোগ্রাম পরিবর্তন করাই প্রোগ্রাম রক্ষণাবেক্ষণ।
নতুন প্রোগ্রাম তৈরী অপেক্ষা পুরানো প্রোগ্রাম রক্ষণাবেক্ষনে অধিক সময় ও অর্থ ব্যায় সাপেক্ষ।
৭। প্রোগ্রাম ডকুমেন্টেশন
ভুল সংশোধনের পর প্রোগ্রাম ঠিকমত কাজ করলে প্রোগ্রামটিকে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। এই সংরক্ষণ করাকে প্রোগ্রাম ডকুমেন্টেশন বলে। প্রোগ্রাম ডকুমেন্টেশন প্রোগ্রামের জন্য তার কাজের একটি লিখিত দলিল।
আরো পড়ুন
রোবটিকস বা রোবট কি?রোবটের গঠনগত উপাদানসমূহ কি কি?
ই-হেলথ কী? টেলিমেডিসিন একটি সেবা আলোচানা কর।
জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতাগুলি কি কি?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?
দুরশিক্ষণ বা ডিসট্যান্স লার্নিং
টেলি কনফারেন্স ও ভিডিও কনফারেন্স কী?
No comments
Don't share any link