নেটওয়ার্ক টপোলজি কাকে বলে। চিত্রসহ বিভিন্ন প্রকার নেটওয়ার্ক টপোলজি সম্পর্কে আলোচনা কর।
![]() |
নেটওয়ার্ক টপোলজি |
নেটওয়ার্ক টপোলজি বলতে আমরা বুঝি-
যে কাঠামো অনুসারে কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে। নেটওয়ার্ক টপোলজি হলো নেটওয়ার্ক সংগঠন যা দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে পারস্পারিক সংযোগ ব্যবস্থা।
বাস টপোলজি :
![]() |
বাস টপোলজি : |
যে নেটওয়ার্ক টপোলজিতে একটি মূল তার এর মাধ্যমে সবগুলো কম্পিউটারকে যুক্ত করা হয় তাকে বাস টপোলজি বলে। এই টপোলজিতে একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারকে বাস লাইনের মাধ্যমে সিগনাল পাঠায়। বাস লাইনের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য কম্পিউটারগুলো সেই সিগনাল পরীক্ষা করে এবং কেবলমাত্র প্রাপক কম্পিউটার সেই সিগনাল গ্রহণ করে। বাস টপোলজি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে নেটওয়ার্কের যোগাযোগে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না। এই টপোলজিতে কম ক্যাবল প্রয়োজন হয়, ফলে খরচও কম হয় এবং সহজে বাস সম্প্রসারণ করা যায়। বাস টপোলজির অসুবিধা হলো নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বেশি হলে বেশি ট্রাফিক এর কারণে ডেটা ট্রান্সমিশন ধীর গতিসম্পন্ন হয়।
রিং টপোলজি
![]() |
রিং টপোলজি |
বাস টপোলজির প্রথম কম্পিউটারের সাথে সর্বশেষ কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপন করলে যে নেটওয়ার্কের সৃষ্টি হয় তাকে রিং টপোলজি বলে রিং টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো বৃত্তাকার পথে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে রিং টপোলজিতে তথ্যে একমুখী প্রবাহ মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটারে ডেটা পাঠিয়ে থাকে রিং টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা হলো নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটি কম্পিউটার ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য সমান অধিকার পায় এবং নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ডেটা ট্রান্সমিশনে তেমন অসুবিধা হয় না রিং টপোলজিতে কোন সার্ভার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় না রিং টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা হলোএনেটওয়ার্কে একটি মাত্র কম্পিউটার নষ্ট হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। রিং টপোলজিতে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নির্ণয় করা জটিল এবং কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়লে ডেটা ট্রান্সশিন গতি কমে যায়।
স্টার টপোলজি
![]() |
স্টার টপোলজি |
যে টপোলজিতে কম্পিউটার একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস হাব (HUB) সুইচের (Switch) মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত থাকে তাকে স্টার টপোলজি বলে। অফিস আদালতে বা ছোট নেটওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে স্টার টপোলজি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। স্টার টপোলজির সুবিধা হলো কোন কম্পিউটার নষ্ট হলেও নেটওয়ার্কের অন্যান্য কম্পিউটার যোগাযোগ করতে পারে। এছাড়া স্টার টপোলজিতে নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ বা সমস্যা নিরুপণ করা অত্যন্ত সহজ। স্টার টপোলজির অসুবিধা হলো হাব বা সুইচ নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়ে।
ট্রি টপোলজি
![]() |
ট্রি টপোলজি |
যে টপোলজিতে একাধিক হাব বা সুইচ ব্যবহার করে সমস্ত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ স্থানে (Root) সংযুক্ত করা হয় তাকে ট্রি টপোলজি বলে। স্টার টপোলজির উন্নত সংস্করণ হলো ট্রি টপোলজি। ট্রি টপোলজিতে এক বা একাধিক লেবেল থাকে। প্রথম লেবেলের কম্পিউটারের সাথে দ্বিতীয় লেবেলের কম্পিউটার, আবার দ্বিতীয় লেবেলের কম্পিউটারের তৃতীয় লেবেলের কম্পিউটার যুক্ত থাকে। ট্রি টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা হলো সহজে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা যায় এবং নেটওয়ার্ক থেকে কম্পিউটার বাদ দেয়া যায়। এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনা কাজে ট্রি
টপোলজি বেশ উপযোগী। ট্রি টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা হলো রুট কম্পিউটারে কোন সমস্যা দেখা দিলে ট্রি নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে এবং অন্যান্য টপোলজির তুলনায় ট্রি টপোলজি
জটিল।
মেশ টপোলজি
![]() |
মেশ টপোলজি |
যেটপোলজির প্রত্যেকটি কম্পিউটার প্রত্যেকটি কম্পিউটারের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে তাকে মেশ টপোলজি বলে। মেশ টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা হলে নেটওয়ার্কের একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে দ্রুতগতিতে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়। এ নেটওয়ার্কে কোন সংযোগ লাইন নষ্ট হয়ে গেলে খুব বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় না এবং তা খুব সহজে সমাধান করা যায়। মেশ টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা হলো এ নেটওয়ার্কে সবচেয়ে বেশি তার ব্যবহার করতে হয় যা ব্যয়বহুল এবং জটিল।
হাইব্রিড টপোলজি
![]() |
হাইব্রিড টপোলজি |
যে টপোলজিবাস, স্টার, রিং ইত্যাদি টপোলজির সমন্বয়ে তৈরি হয় তাকে হাইব্রিড টপোলজি বলে। ইন্টারনেট হলো একটি হাইব্রিড টপোলজি কারণ এটি সব ধরনের নেটওয়ার্কেই সংযুক্ত। হাইব্রিড নেটওয়ার্কের সুবিধা হলো এ নেটওয়ার্কের আকার বড় হতে পারে এবং সহজে ডেটা স্থানান্তর করা যায়। হাইব্রিড নেটওয়ার্কের অসুবিধা হলো এ ধরনের টপোলজিতে ব্যবহৃত সকল হাব বা সুইচ সব সময় অন রাখতে হয়।
বাস, রিং, স্টার ও মেশ টপোলজির মধ্যে তুলনা।
বাস |
রিং |
স্টার |
মেশ
|
১. একটি মূল তারের বা বাসের দুপাশে কম্পিউটার গুলি সংযুক্ত থাকে। এখানে কোন কেন্দ্রিয় কম্পিউটার থাকে না। প্রতিটি কম্পিউটার মূল বাসের সাথে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। মূল তারকে ব্যাকবোন বলা হয়। |
১. একটি তারের সাথে কম্পিউটার গুলি সংযুক্ত থেকে বৃত্তাকার ভাবে তারের দুইমাথা একত্রে সংযুক্ত থাকে। এখানে ডেটা একমুখী প্রবাহের মাধ্যমে চক্রাকারে ঘোরে। এটির কোন মূল কম্পিটার থাকে না। সকল কম্পিউটারের সমান গুরুত্ব |
১. কেন্দ্রিয়ভাবে হাব বা সুইচের সাথে কম্পিউটাগুলি সংযুক্ত থাকে। ডেটা চলাচল নিয়ন্ত্রন করে হাব বা সুইচ। হাব বা সুইচের পোর্টের উপর নির্ভর করে কয়টি কম্পিউটার সংযুক্ত হবে। |
১. কম্পিউটাগুলি প্রতিটি পরস্পর পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় কোন মাধ্যম ছাড়াই প্রতিটি কম্পিউটার অন্যান্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। এ ব্যবস্থাকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট লিংক বলে।
|
২. যে কোন একটি নোড কম্পিউটার নষ্ট হলে নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা হয় না। তবে মুল তার নষ্ট হলে নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। |
২. যে কোন একটি নোড কম্পিউটার নষ্ট হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। |
২. যে কোন একটি নোড কম্পিউটার নষ্ট হলে নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা হয় না। তবে হাব বা সুইচ নষ্ট হলে নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে। |
২. যে কোন একটি নোড কম্পিউটার নষ্ট হলে নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা হয় না। অন্য কম্পিউটারগুলি সচল থেকে তথ্য আদান প্রদান করে।
|
৩. অল্প ক্যাবলের প্রয়োজন হয় বলে সংযোগ লাইনের খরচ কম। স্বল্প খরচে এ নেটওয়ার্ক তৈরি সম্ভব। |
৩. রিং টপোলজির জন্য জটিল নিয়ন্ত্রন প্রোগ্রামের প্রয়োজন হয়। ক্যাবলও বেশি লাগে। ফলে এই নেটওয়ার্কে খরচ তুলনামূলক বেশি। |
৩. অনেক বেশি ক্যাবলের প্রয়োজন হয় এবং হাব বা সুইচের দামও বেশি তাই এ নেটওয়ার্ক তৈরিতে খরচ অনেক বেশি। |
৩. অনেক বেশি ক্যাবলের প্রয়োজন হয় এবং অতিরিক্ত লিংক স্থাপন করতে হয়। তাই এ নেটওয়ার্ক তৈরিতে খরচ অনেক বেশি। |
৪. রিপিটার ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা যায়। |
৪. নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হলে পূর্বের সিস্টেম ভেঙ্গে নতুনভাবে তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান। |
৪. নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হলে হাব বা সুইচের সাথে অন্য হাব বা সুইচ সংযোগ দিতে হয়।ফলে ট্রি টপেলজি তৈরি হয়। |
৪. নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হলে অতিরিক্ত লিংক স্থাপন করতে হয়। ফলে খরচও অনেক বেড়ে যায়।
|
৫. এ টপোলজিতে ডেটা চলাচলের গতি কম |
৫. এ টপোলজিতে ডেটা চলাচলের গতি কম |
৫. এ টপোলজিতে ডেটা চলাচলের গতি বেশি |
৫. এ টপোলজিতে ডেটা চলাচলের গতি অনেক বেশি |
৬. নেটওয়ার্কের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা নিরুপন করা বেশ কষ্টসাধ্য |
৬. নেটওয়ার্কের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা নিরুপন করা বেশ কষ্টসাধ্য। |
৬. নেটওয়ার্কের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সহজে নিরুপন করা যায় এবং সমাধান করা যায়। |
৬. নেটওয়ার্কের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সহজে নিরুপন করা যায় এবং সমাধান করা যায়।
|
৭. স্বল্পব্যায়ে ল্যাব বা কোন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য এই টপোলজি উত্তম। |
৭. এই টপোলজি তৈরি করা সহজ বিধায় বসাবাড়িতে ব্যবহৃত হয়। তবে এটির ব্যবহার তুলনামূলক কম। |
৭. বর্তমান এই টপোলজি অফিস আদালতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। |
৭. ব্যাংক, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেখানে খরচ মূখ্য নয় উচ্চ গতি ও ডেটার নিরাপত্তাই কাম্য সেখানে এই টপোলজি ব্রবহৃত হয়। |
No comments
Don't share any link